স্রোডিঞ্জারের তরঙ্গ সমীকরণ হলো কোয়ান্টাম মেকানিক্সের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। কোয়ান্টাম মেকানিক্সে স্রোডিঞ্জারের তরঙ্গ সমীকরণকে তুলনা করা হয় চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রের সাথে। একটা ইলেকট্রন একই সাথে দুই ছিদ্র দিয়ে যাবে , এটা কি কখনো হতে পারে ? আচ্ছা ইলেকট্রনের প্যাটার্ন সৃষ্টি করে কিন্তু বড় বড় বস্তু তাদের প্যাটার্ন তৈরি করে না কেন ? বিজ্ঞানীরা পরমাণু , অনু দিয়ে পরীক্ষা করেছে কিন্তু রেজাল্ট একই ! 1999 সালে 60 পরমাণু দিয়ে দ্বিচির পরীক্ষা করার পর বিজ্ঞানীরা দেখতে পেলেন প্রতি ক্ষেত্রেই প্যাটার্ন সৃষ্টি হয় । কিন্তু বড় পরমাণুর ক্ষেত্রে পরমাণুর আকার বাড়ার সাথে সাথে সূত্র অনুযায়ী তরঙ্গদৈর্ঘ্য হ্রাস পায় । ফলে ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের জন্য ক্ষুদ্র চিরের প্রয়োজন হয় । কিন্তু এতো ক্ষুদ্রছিদ্র দিয়ে বড় পরমাণু প্রবেশ করতে পারে না ।
আচ্ছা কাউকে যদি একটা ইলেকট্রনের সমান আকারে পরিণত করে দ্বিচিরের ভিতরে পাঠানো যেত তাহলে কেমন হতো ? সে একজন মানুষ । সে কি একই সাথে দুইটা ছিদ্রের মধ্য দিয়ে যাবে ? দেয়ালে কি প্যাটার্ন সৃষ্টি করবে ? সেই মানুষ কি একই সাথে সব জায়গায় থাকবেন ?
2
চলুন এবার একটু ভূতের গল্প করি ! আমার বাড়িতে অনেক ভূত আছে । একদিন রাতে মাঠে হাটছিলাম ছিলাম । হঠাৎ আমার কাছে মনে হলো আমার পিছনে কেউ আছে । আমি পিছনে কারো হাঁটার শব্দ শুনতে পাচ্ছি । আমি পিছনে তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না । আমি ভাবলাম হয়তো আমার মনের ভুল , এটা ভেবে আবার সামনে হাঁটা শুরু করলাম । যখনি আমি হাঁটতে শুরু করেছি ঠিক তখন আবার সে আগের শব্দ শুনতে পেলাম । আবার পিছনে তাকালাম কিন্তু পিছনে তাকানোর সাথে সাথে শব্দ গায়েব ! এখন আমি খুব ভয় পেলাম কিন্তু হতাশা হলাম না । আমি বুঝলাম এটা আমার মনের ভুল হতে পারে না । এইভাবে বার বার করতে থাকলে সব সময় একই দৃশ্য দেখতে পাই । অন্য উপায়ে ভাবতে হবে । পকেট থেকে মোবাইল বের করে শব্দ রেকর্ড করার জন্য রেকর্ডিং চালু করলাম । সত্যি শব্দ রেকর্ড হচ্ছে ! আমি যখন পিছনে তাকাই তখন শব্দ উধাও । আমি ভাবলাম কেউ কি আমার সাথে মজা করছে নাকি ? আমি ক্যামেরা চালু করলাম । ক্যামেরা পিছনের দিকে তাক করে ঘুরিয়ে সামনের দিকে হাঁটলাম । অদ্ভুত ! যখন আমি ক্যামেরা পিছনের দিকে ঘুরিয়ে রাখি ঠিক তখন কোনো শব্দ নেই । ক্যামেরা সামনে ঘুরানো মাত্র সেই শব্দ । আমি বুঝলাম না । আসলে কি হচ্ছে আমার সাথে ? আমি ভয় পেয়ে ঘামতে শুরু করলাম । আমি দেখামাত্র কোনো শব্দ নেই আর না দেখলে শব্দ শুনতে পারি । আমি খুব দ্রুত বাসায় চলে আসলাম , বাসায় এসে মোবাইল বের করে রেকর্ডিং শুনলাম । রেকর্ডিং শুনে বুঝলাম সত্যি কেউ আমার পিছনে ছিলো , কারো পায়ের শব্দ রেকর্ড হয়েছে । আমি ঘুমিয়ে পড়লাম । সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইলের সে রেকর্ডিং শোনার চেষ্টা করলাম অনেক খোঁজার পর আমার মোবাইলে কোনো রেকর্ডিং নেই । আমি তো রাতে ঘুমানোর সময় রেকর্ডিং ডিলিট করি নেই তাহলে সেটা গেলো কোথায় ? আমার মনে হলো যে আমি রাতে কোনো স্বপ্ন দেখেছি আমি সেই স্বপ্নকে সত্যি মনে করেছিলাম । স্বপ্নটা কি ছিলো ঠিক মনে নেই । এখনো বুঝতেছি না এটা স্বপ্ন নাকি বাস্তব ছিলো । স্বপ্ন ছিলো এর কোনো প্রমাণ নেই আবার সত্যিও ছিলো তারও কোনো প্রমাণ নেই ।
3
গল্পটা কাল্পনিক । কিন্তু কনারা ঠিক এমন আচরণ করে । যখনি কেউ ইলেকট্রনকে দেখতে চায় তখন ইলেকট্রন তার তরঙ্গ ফাংশন কলাপ্স করে । ইলেকট্রনকে দেখার আগ পর্যন্ত ইলেকট্রন একই সাথে সব জায়গায় অবস্থান করতে পারে । ইলেকট্রনকে কেউ দেখতে চাইলে ইলেকট্রন তার তরঙ্গ ফাংশন কলাপ্স করে একটি স্টেটে চলে আসে । ইলেকট্রনকে যখন অবজার্বড করা হয় তখন ইলেকট্রন তরঙ্গ ধর্ম থেকে কণা ধর্ম হয়ে যায় । ইলেকট্রন কিভাবে বুঝলো তাকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে ? ইলেকট্রনের কি জ্ঞান বুদ্ধি আছে ? না নেই , তবে ইলেকট্রনের অদ্ভুত আচরণ রয়েছে ।
ইলেকট্রন কোথায় থাকে সেটা আমরা জানি না আমরা শুধুমাত্র সম্ভবনার কথা বলতে পারি । যা শ্রোডিঞ্জারের সমীকরণ দিয়ে জানা যায় ।
4
আমার মনে কয়েকটা প্রশ্ন উঁকি দেয় সারাক্ষণ । নিউক্লিয়াসের চারপাশে ইলেকট্রন কোথায় থাকে ?
ইলেকট্রন একই সাথে কনা ও তরঙ্গ ধর্ম রয়েছে । কনা এবং তরঙ্গ দুইটা যে আলাদা নিয়ম পদার্থবিজ্ঞানে। বৃহৎ বস্তুর বেলায় তরঙ্গ অনেক ক্ষুদ্র । ক্ষুদ্র বলতে এতই ক্ষুদ্র যে তার জন্য অত্যন্ত নগণ্য । তাই বৃহৎ বস্তুর জন্য তরঙ্গদৈর্ঘ্য উপেক্ষা করে নিউটনের বলবিদ্যা যথেষ্ট সুন্দর ভাবে সাজানো । কিন্তু কোয়ান্টাম জগতের সেটা কিভাবে উপেক্ষা করা যাবে ? কোয়ান্টাম জগতে কণার আকার আকৃতি এত ক্ষুদ্র যে তার জন্য তরঙ্গদৈর্ঘ্য উপেক্ষা করা যায় না । যার জন্য নতুন বলবিদ্যার খুব প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছিল । চিরায়ত বলবিদ্যা তরঙ্গ ও বস্তুর জন্য আলাদা আলাদা সমীকরণ রয়েছে । তরঙ্গ ও বস্তু সম্পূর্ণ আলাদা বলবিদ্যা । কিন্তু ইলেকট্রন একই সাথে কনা ও তরঙ্গ । বস্তু ও তরঙ্গ বলবিদ্যাকে এক করার স্বার্থে নতুন গণিতের প্রয়োজন দেখা দিল । কারণ বস্তুর সাথে যে তরঙ্গ থাকে তা কোয়ান্টাম বলবিদ্যা উপেক্ষা করা যায় না । কোথায় সে বলবিদ্যা ? কোয়ান্টাম বলবিদ্যার জন্য নতুন সমীকরণ নিয়ে হাজির হলেন এরউন শ্রোডিঞ্জার ।
শ্রোডিঞ্জার ব্রগলির কণা – তরঙ্গের দ্বৈত নীতির জন্য একটা সমীকরণ খোঁজ করলেন । কণা কোথায় থাকে তার জন্য একটা বলবিদ্যা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ালো । শ্রোডিঞ্জার জানতেন না বস্তু তরঙ্গ এর জন্য সমীকরণ কেমন হবে ?
পদার্থবিজ্ঞানে বস্তু ও তরঙ্গ দুইটি আলাদা ব্যাপার । দুইটার জন্য আলাদা আলাদা সমীকরণ রয়েছে । যখন একটা বস্তুর কথা বলবো তখন বুঝায় বস্তুটি নির্দিষ্ট দূরত্বে ( x,y,z ) অক্ষে অবস্থান করে । আর যখন তরঙ্গের কথা বলবো তখন আর নিরুদ্দিষ্ট বুঝায় না , পুরো জায়গা জুড়ে অবস্থান বোঝায় । পুকুরে একটা ঢিল ছুড়লে পুকুরে ঢেউ সৃষ্টি করবে । এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে ঢেউ কোথায় আছে তাহলে নির্দিষ্ট জায়গা বলবো না । তখন বলতে হবে পুরো পুকুর জুড়ে ঢেউ অবস্থান করে । তখন বলতে হবে পুরো পুকুর জুড়ে ঢেউ অবস্থান করে । কোয়ান্টাম জগতে কনার অবস্থান কী হবে ? শব্দ তরঙ্গের জন্য বলবিদ্যা রয়েছে । তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গের জন্য রয়েছে বলবিদ্যা । কিন্তু বস্তু তরঙ্গ এর জন্য কিভাবে বলবিদ্যা কাজ করবে ? বস্তু তো নিজেই গতিশীল কণা । শ্রোডিঞ্জার কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিলো তরঙ্গের অবস্থান নির্ণয় করা । তবে শ্রোডিঞ্জার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে কিভাবে প্রথমে শুরু করা উচিত । 1926 সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত তিনি চারটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন । যা স্রোডিঞ্জারের তরঙ্গ সমীকরণ নামে পরিচিত ।
5
যাই হোক শ্রোডিঞ্জার ইলেকট্রন কে তরঙ্গ ধরে সমীকরণ তৈরি করলেন । শ্রোডিঞ্জার সমীকরণের মূল ভাব ছিল একটা কণাকে কোথায় পাওয়া যাবে তার মাত্র সম্ভাবনা। চিরায়ত বলবিদ্যা অনুযায়ী একটা বস্তু যে কোন নির্দিষ্ট একটা বিন্দুতে শতভাগ নিশ্চিন্তে পাওয়া যাবে । শ্রোডিঞ্জার সমীকরণ আমাদের চিন্তা-চেতনা কে পাল্টে দিয়েছে । ইলেকট্রন কোথায় পাওয়া যাবে বা ইলেকট্রন বর্তমান কোথায় রয়েছে তা শতভাগ নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে না । শ্রোস্রোডিঞ্জারের তরঙ্গ সমীকরণ দিয়ে ইলেক্ট্রন কোথায় থাকা পারে তার সম্ভাবনা বলা যাবে । তখন বলতে হবে ইলেকট্রন অমুক বিন্দুতে থাকতে পারে । 90 % সম্ভাবনা রয়েছে ইলেকট্রন সেই বিন্দুতে থাকার । ইলেকট্রন অমুক বিন্দুতে আছে না বলে থাকা পারে বলতে হবে । ইলেকট্রন কোথায় রয়েছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না , ইলেকট্রন কোথায় থাকতে পারে তার সম্ভাবনা শুধু সমীকরণ দিয়ে বের করা যাবে । কিন্তু এটা বলা যাবে না ইলেকট্রন বিন্দুতে রয়েছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বেলায় তা বলতে হবে থাকা পারে কিন্ত আছে বলা যাবে না । “হবে না” ” হতে পারে ” এটাই কোয়ান্টাম মেকানিক্স । কোয়ান্টাম মেকানিক্স আসার আগে আমরা বলতাম একটা বস্তু নির্দিষ্ট একটা জায়গার অবস্থান করে । নিউটনের সূত্র দ্বারা আমরা বলতে পারি বস্তুটি বর্তমান কোথায় রয়েছে এবং ভবিষ্যতে কোথায় থাকবে । নিউটনের সূত্র কোন সম্ভাবনা কথা বলে না ।
6
স্রোডিঞ্জারের তরঙ্গ সমীকরণ কিরকম ?
শ্রোডিঞ্জার বস্তুর তরঙ্গের জন্য ‘ ψ ‘ সাইকে প্রতীকস্বরূপ ধরে নিয়েছে । শ্রোডিঞ্জার বুঝতে পেরেছে আসলে জটিল রাশি হবে ।সাই কাল্পনিক রাশি \begin{array}{l}{i}\mathrm{{=}}\sqrt{\mathrm{{-}}{1}} \end{array} সাই এর জটিল হবার কি প্রয়োজন ছিল ? সাধারণ তরঙ্গ শুধুমাত্র সামনের দিকে অগ্রসর হয় কিন্তু বস্তু তরঙ্গ অন্য রকম আচরণ করে । বস্তু তরঙ্গ একই সাথে সামনের দিকে অগ্রসর হয়
কিন্তু বস্তু তরঙ্গ একই সাথে সামনের দিকে অগ্রসর হয় আবার গোল হয়ে ঘুরতে থাকে ।
বস্তু তরঙ্গের সমীকরণ হবে ,
\begin{array}{l} {\mathit{\psi}\mathrm{{=}}\left|{\mathit{\Psi}}\right|\sin\left({\mathit{\omega}{t}\mathrm{{-}}{kx}}\right)\mathrm{{+}}\left|{\mathit{\Psi}}\right|\cos\left({\mathit{\omega}{t}\mathrm{{-}}{kx}}\right)}\\ \end{array}
এই সমীকরণকে সমাধান করে সাই ” ψ ” এর মান বের করা যাবে । স্রোডিঞ্জারের তরঙ্গ সমীকরণ থেকে বস্তু তরঙ্গ এর সমীকরণ সমাধান করেন পরের অধ্যায়ে আমরা তার প্রতিবাদ করবো । শ্রোডিঞ্জারের সমীকরণ ,
এই সমীকরণে m হলো ইলেকট্রনের ভর , E হল ইলেকট্রনের শক্তি এবং U (x) ইলেকট্রনের বিভব শক্তি ।
আপাতত প্রমান থাক । বইয়ে সহজ আলোচনা করা হয়েছে। বই নিতে চাইলে আমাকে মেসেজ দিতে পারেন ফেইসবুক লিংক । রকমারি লিংক
রেফারেন্স :
রহস্যময় কোয়ান্টাম মেকানিক্স -লেখক- মোহাম্মাদ ইয়াছিন