1
1885 সালের 7 ই অক্টোবর নিলস হেনরিক বোর কোপেনহেগেন শহরে জন্মগ্রহণ করেন । এই শহরের তিনি জীবনের অনেকটাই সময় কাটিয়েছেন । পরবর্তী কোপেনহেগেন তার গবেষণার কেন্দ্র হয়ে উঠে ।
তার পরিবার ছিলেন শিক্ষিত এবং ধনী , বাবা ক্রিশ্চিয়ান বোর ছিলেন চিকিৎসাশাস্ত্রে বিখ্যাত অধ্যাপক । রক্তে হিমোগ্লোবিন থেকে অক্সিজেন নিঃসৃত হয় , এর জন্য দায়ী কার্বন ডাই অক্সাইড যা bhor effect নামে পরিচিত । ক্রিশ্চিয়ান বোর এই ধারণা দেন । বোরের মা এলেনও ছিলেন উচ্চশিক্ষিত ।
1893 সালে বোর ভর্তি হোন কোপেনহেগেন বিদ্যালয় । তারপর 1903 সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন তিনি । 1907 সালে পানির উপর একটি গবেষণায় প্রবন্ধ প্রকাশ করেন । যা ছিল পানির পৃষ্ঠটান সম্পর্কে । যার জন্য তিনি ডেনিস বিজ্ঞান একাডেমী থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন ।নিলস বোরের বাবা ক্রিশ্চিয়ান বোর 1885 সালে ডেনিস বিজ্ঞান একাডেমী থেকে রোপ্যপদক লাভ করেন । বোরের বাবা সব সময় গর্ব করে বলতেন ,” I am silver but Neils is gold ”

ক্রিশ্চিয়ান বোর নিলস বোরের বাবা , bhor effect আবিস্কারক
2
1909 বোর এম . এস ডিগ্রি অর্জন করেন । তার শিক্ষক ক্রিশ্চিয়ান ক্রিশ্চিয়ানসেন তাকে ” ইলেকট্রন তত্ত্ব ” ব্যবহার করে ধাতুর ভৌত গুণাবলী ব্যাখ্যার জন্য গবেষণা করতে বলেন । 1911 সালে বোর ” ইলেকট্রন তত্ত্বের ” উপর পি এইচ ডি গবেষণা প্রবন্ধ লেখেন । শিক্ষকদের সামনে 90 মিনিটের এক বক্তৃতায় তার পত্রটি উপস্থাপন করেন । যেখানে দুজন শিক্ষক ছিলেন তার মধ্যে একজন তার বাবার বন্ধু ও তার শিক্ষক ক্রিশ্চিয়ান ক্রিশ্চিয়ানসেন । ক্রিশ্চিয়ান সেদিন আক্ষেপ করে বলেছিলেন ধাতব পদার্থ সংক্রান্ত তত্বের মূল্যায়নের জন্য ডেনিসে কোনো পদার্থ বিজ্ঞানী নেই । অতএব , বোরকে ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়া হলো । তার পিএইচডি পেপার মূল্যায়নের জন্য জার্মানে ম্যাক্স প্লাঙ্ক ও হেনরিক লরেন্টেজের কাছে পাঠানো হলো । কিছুদিন চলে যাবার পর জার্মান থেকে যখন কোনো চিঠির উত্তর আসে না তখন বোর বুঝতে পেরেছিলেন যে চিঠির ভাষা ইংরিজিতে অনুবাদ করা উচিত ছিল । জার্মান থেকে যখন কোনো উত্তর এলো না তখন তার জন্য বোর পিএইচডি এর ভাষাকে দায়ী করলেন । তাই বোর তার পিএইচডি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন । ভাষা নিয়ে বোর সব সময়ে ভুগতেন । তার প্রেমিকা নার্গ্রেথ নোল্যান্ড তাকে ইংরেজি ভাষা লিখতে সাহায্য করতো । যদিও 1922 সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ।
3
বোরের ইচ্ছে ছিল ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার । তাই তিনি তাঁর ইংরেজিতে অনুবাদ করা থিসিস পেপার নিয়ে জে জে টমসন এর নিকটে যান । ক্যামব্রিজ নিউটন ও ম্যাক্সওয়েলের মতো একটা সময় বিখ্যাত বিজ্ঞানী ছিলেন । থিসিস পেপার নিয়ে জে জে টমসন এর নিকটে হাজির হলেন । বোর হয়তো ভেবেছিলেন নিজের থিসিস পেপার এর সাথে জে জে টমসনের সূত্র নিয়ে টমসনের সাথে কথা বলালে টমসন বেশি খুশি হবে তাই জন্য তার থিসিস পেপারের সাথে টমসনের সূত্র নিয়ে গেলেন । বোর সেই অনুযায়ী থমসেনের একটি সমীকরণ বের করে বললেন তার এই সমীকরণে ভুল আছে । থমসন এতো বড় বিজ্ঞানী । তার সামনে হয়তো কেউ এভাবে কোনো দিন তার ভুল সম্পর্কে কথা বলে নেই । বোর এমন স্বভাবের , কারো কোনো সমীকরণ ভুল থাকলে তা সরাসরি বলে দিতেন । আইনস্টাইনের সাথে সমান – সমানি লড়াই করার ক্ষমতা খুব কম বিজ্ঞানির ছিল । বোর আইনস্টাইন কে একবার নয় বার বার হারিয়েছেন । আমরা সেই সব বিষয় নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করবো ।
থমসন বোরকে আশ্বাস দিলেন যে নিশ্চয়ই তার থিসিস পেপার পড়বেন । দিন যায় , রাত যায় এভাবে করে সপ্তাহ চলে যায় দিনে দিনে টমসন খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে । যার কারণে টমসনের পক্ষে বোরের থিসিস পেপার পড়া সম্ভব হয়ে উঠে না । বোর ভেবেছিলেন হয়তো টমসন তার থিসিস পেপার পড়বে , এই সুবাদে যদি সে টমসনের সাথে গবেষণা করতে পারে তাহলে তো ভালো হবে । কিন্তু হতাশ হলেন বোর , টমসন তার থিসিস পেপার আর পড়ার সময় পাননি ।
কথায় আছে না , ” আল্লাহ সব সময় ভালো কিছু দেয় ” টমসনের সাথে কাজ করতে পারেনি ঠিকই কিন্তু মহান শিক্ষক রাদারফোর্ডের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন বোর । রাদারফোর্ড এমন একজন শিক্ষক ছিলেন , যার অধীনে 12 জন শিক্ষার্থী পড়তো তাদের মধ্যে 11 জন শিক্ষার্থী নোবেল পুরস্কার পায় । 11 জনের ভিতরে বোর ছিলেন একজন ।
3
বোর ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় গেলেন তার বাবার এক শিক্ষার্থীর সাথে দেখা করতে । তার নাম লোরেন স্মিথ । সে বোরকে রাদারফোর্ড এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন । অনেকদিন পর বোর খুব খুশি হলেন কারণ রাদারফোর্ড খুব আন্তরিক ছিলেন তাঁর ছাত্রদের প্রতি । রাদারফোর্ড বোরকে ভালোবাসতেন ।
কিছুদিনের মধ্যে ম্যানচেস্টারে হাভেসের এর সাথে বোরের পরিচয় হয় । হ্যাভেস রসায়নবিদ ছিলেন । সে বোরকে রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল সম্পর্কে অনেক কিছু বিস্তারিত বললেন । সেদিন হ্যাভেসের সাথে কথা বলার পর বোর পরমাণুর প্রতি গবেষণার আগ্রহ খুঁজে পায় । তার আগে রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল নিয়ে বোরের তেমন আগ্রহ ছিলো না । কিছুদিনের মধ্যে বোর রাদারফোর্ডের পরমাণু তত্ত্ব আয়ত্ত করে ফেলেন ।
চার্লস গ্যালটন ডারউইন । বিবর্তন বিদ্যার জনক চার্লস ডারউইনের নাতি চার্লস গ্যালটন ডারউইন । বংশের ধারাক্রমে বিজ্ঞানের ভিতর থাকলেও ডারউইনের নাতি পদার্থ বিজ্ঞানকে মন প্রাণে ভালোবাসেন ।
চার্লস গ্যালটন ডারউইন একটা প্রবন্ধ তৈরি করেন যার বিষয়বস্তু ছিলো ” আলফা কণার ভেদন ক্ষমতা ” । পদার্থের ভেতরে আলফা-কণা কেন শক্তি হারায় ?
এই ছিলো ডারউইনের বিষয়বস্তু । তিনি বলেন আলফা কণার শক্তির ভূমিকা পালন করে পদার্থের মধ্যে থাকা পারমাণবিক ইলেকট্রন । আকর্ষণের কারণে হয়তো আলফা কণার শক্তি হারার । ডারউইন জানতেন না রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের ইলেকট্রন বিন্যাস কেমন । তিনি মনে করতেন পরমাণুর ব্যাসার্ধ এবং চার্জের উপর নির্ভর করবে আলফা-কণা কতটুকু শক্তি হারিয়ে যাবে । কিন্তু তার অনুমানের সাথে পরমাণুর ব্যাসার্ধ মিলে নাই ।
বোর ডারউইনের প্রবন্ধ দেখে বুঝতে পেরেছেন ডারউইন আসলে ইলেকট্রনকে বিন্যাসে ভুল করেছে । রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল সম্পর্কে বোর সচেতন ছিলেন অনেক আগে থেকেই । কিভাবে ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব রাদারফোর্ডের মডেলকে আক্রমণ করে সেটা নিয়ে তিনি ভাবতেন । একদিকে ডারউইনের ভুল সংশোধন ও অন্যদিকে পরমাণু মডেলকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য এগিয়ে আসলেন । বোর রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলকে ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বের হাত থেকে বাঁচাতে মাঠে নামলেন । রাদারফোর্ড জানতেন না বোর তার মডেল সংশোধন করার জন্য পিছনে লেগেছে । রাদারফোর্ড মনে করেছিলেন হয়তো বোর ডারউইনের তত্ত্বের ভুল সমাধান করার চেষ্টা করছেন ।
4
চিরায়ত পদার্থ বিজ্ঞানের মতে ইলেকট্রন আবর্তন করার সময় নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে শক্তি হারাবে । যার ফলে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সর্পিল আকারে নিউক্লিয়াসে হুমাড়ি খেয়ে পরবে । শক্তি নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বিকিরণ করতে করতে ইলেকট্রন নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পরমাণুর কক্ষপথ ছোট হতে থাকবে । যার ফলে ইলেকট্রন সর্পিল আকারে নিউক্লিয়াসের কেন্দ্রে পড়বে । কিন্তু বাস্তবে ইলেকট্রন এইভাবে শক্তি বিকিরণ করে না । পরমাণুর কক্ষপথে ইলেকট্রন যখন আবর্তন করে তখন ত্বরণ আকারে আবর্তন করে । ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব অনুসারে কোনো চার্জিত কণা ত্বরিত হলে তাহলে সে কণা শক্তি বিকিরণ করবে । কিন্তু ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারপাশে ত্বরিত হওয়ার পরও কেন শক্তি বিকিরণ করে না ?

নিলস হেনরিক বোর যিনি কোয়ান্টাম তত্বের সাহায্য পরমাণুর মডেল দেন
1900 সালে ম্যাক্সপ্লাঙ্ক কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন এবং 1905 সালে এই তত্ত্বকে আইনস্টান আরো মজবুত করে গড়ে তোলেন । কোয়ান্টাম তত্ত্বের মুল ভাব হলো শক্তি বিকিরণ করবে ” কোয়ান্টা ” আকারে । বোর প্রথম প্রথম কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রতি সন্তুষ্টি ছিলেন না । তবুও বোর কোয়ান্টাম তত্ত্ব পরমাণু মডেলে প্রয়োগ করতে চাইলেন কারণ কোয়ান্টাম তত্ত্বের অনেক সফলতা রয়েছে তাছাড়া শক্তি যেহেতু কোয়ান্টা আকারে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই পরমাণু স্থিতি থাকতে সাহায্য করবে । ইলেকট্রন শক্তি বিকিরণ করে এবং কোয়ান্টাম তত্ত্ব বিকিরণ শক্তি কোয়ান্টা বা প্যাকেট আকারে বিকিরণ করে । তাই বোর ভাবলেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব পরমাণুর ভিতরে প্রয়োগ করে দেখা উচিত ।
চিরায়ত পদার্থ বিজ্ঞানের মতে শক্তি ভগ্নাংশ হারে কমতে পারে । যার ফলে ভগ্নাংশ আকারে কক্ষপথে ব্যাসার্ধ কমতে থাকবে । যদি শক্তি কোয়ান্টা আকারে বিকিরণ করে তাহলে নিউক্লিয়াসের কক্ষপথ কোয়ান্টা হিসাবে থাকবে । ব্যাপারটা এমন যে আমার পকেটে 10 টাকা আছে তার মানে আমি দশ টাকার বড়লোক । 10 টাকা থাকা মানে আমি দশ তলা উপরে থাকার ক্ষমতা অর্জন করছি । নয় টাকা থাকলে আমি নয় তলা থাকার ক্ষমতা অর্জন করেছি । আর এক তলা থাকলে তাহলে বুঝতে হবে আমার কাছে এক টাকা আছে তাই এক তলা থাকার ক্ষমতা অর্জন করেছি । যদি আমার কাছে কোনো টাকা না থাকে তাহলে আমি সে বাড়িতে থাকতে পারবো না । ঠিক তেমনি ইলেকট্রনের কাছে E1 পরিমাণ শক্তি আছে তার মানে ইসেকট্রন R1 অর্থাৎ প্রথম শক্তি স্তরে থাকতে পারবে । যদি E2 পরিমাণ শক্তি থাকে তাহলে ইলেকট্রন R2 শক্তিস্তরে থাকবে যেহেতু ইলেকট্রন E1 ,E2 ,E3….En শক্তি নিয়ে আছে সেহেতু ইলেকট্রন R1 , R2 ,R3 …..Rn কক্ষপথে থাকবে । ইলেকট্রন R2 থেকে R1 কক্ষপথে যেতে চাইলে ইলেকট্রনকে E2 থেকে E1 শক্তি নিয়ে যেতে হবে । আমাকে যদি 10 তলা থেকে 9 তলা থাকতে হয় তাহলে আমাকে 1 টাকা খরচ করে 9 তলা থাকতে হবে । যদি 10 তলা থাকতে হয় তাহলে আমকে 10 টাকা নিয়ে 10 তলা থাকতে হবে । 10 তলা থেকে 9 তলা থাকতে হলে আমাকে 10 – 9 = 1 টাকা খরচ করতে হবে । ঠিক ইলেকট্রন যখন 2 নং শক্তিস্তর 1 নং শক্তিস্তরে যাবে তখন ইলেকট্রনকে E2-E1 = hf পরিমান শক্তি বর্জন করতে হবে । বোর এই এইভাবে পরমাণু জগতে কোয়ান্টাম তত্ত্ব অন্তর্ভুক্ত করলেন । আবার আমি 9 টাকা দিয়ে 9 তলা থাকি আমি 10 তলা থাকতে চাইলে আমাকে বাহির থেকে 1 টাকা ইনকাম করে 10 টাকা নিয়ে 10 তলা থাকতে হবে । ইলেকট্রন 1 নং শক্তিস্তর থেকে 2 নং শক্তিস্তরে যেতে হলে বাহির থেকে শক্তি দিতে হবে ।
আর একটা উদাহরণ দিই , মনে করেন একটি স্প্রিং ঝুলানো অবস্থায় রাখা আছে । স্প্রিং এর সাথে ইট বেধে দেওয়া হলো । ধরি তিনটা ইট বেঁধে দেওয়া হয়েছে । একটা করে এটা সরালে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্প্রিং সংকোচন হয় । নির্দিষ্ট পরিমাণ ইট কমালে নির্দিষ্ট পরিমাণ সংকোচন হয় ।
এখানে ইট যেহেতু নির্দিষ্ট স্প্রিং এর সংকোচনকৃত তারের দৈর্ঘ্য নির্দিষ্ট হবে ।
5
বোর বললেন ইলেকট্রন থাকতে পারে নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে যখন ইলেকট্রন নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে থাকে তখন ইলেকট্রন কোনো শক্তি বিকিরণ করবে না । তাহলে কি ইলেকট্রন কোনো শক্তি বিকিরণ করবে না ? করবে এক শক্তিস্তর থেকে যখন অন্য শক্তিস্তরে স্থানান্তরিত হবে তখন নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি বিকিরণ করবে । ব্যাপারটা এমন আমি 10 টাকা দিয়ে 10 তলা থাকি এতে আমি সন্তুষ্ট , তাই আমি আর টাকা খরচ করবো না । যখন আমি 9 তলা থাকবো তখন 1 টাকা খরচ করবো এর আগে আমি ভুল করে 1টা টাকাও খরচ করতে পারবো না । শক্তিস্তর পরিবর্তনের সময় ইলেকট্রন শক্তি শোষণ বা বিকিরণ করবে hf =E1 – E2 সমীকরণ অনুযায়ী । যখন ইলেকট্রন একটা নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে থাকে তখন নির্দিষ্ট ভরবেগ নিয়ে অবস্থান করে । ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগ “n” এর পূর্ণ গুণিতক সংখ্যা । বোরের পরমাণু মডেল তিনটি স্বীকার্য ছিলো । এতক্ষণ যা যা বললাম তা একবারে বলি ।
- ইলেকট্রন নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে অবস্থান করে । নির্দিষ্ট শক্তিস্তর ‘n’ এর গুণিতক সংখ্যা ।ইলেকট্রন যখন নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে অবস্থান করে তখন ইলেকট্রন কোনো প্রকারের শক্তি বিকিরণ করে না ।
- নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে নির্দিষ্ট কৌণিক ভরবেগ নিয়ে অবস্থান করে । কৌণিক ভরবেগ ‘n’ এর পূর্ণ গুণিতক সংখ্যা
- ইলেকট্রন কক্ষপথ পরিবর্তন করার সময় শক্তি শোষণ বা বিকিরণ করে ।
6
আমাদের দায়িত্ব হলো বোরের পরমানু মডেল যাচাই করা ।
এখন বোরের পরমাণু মডেল থেকে ইলেকট্রনের বেগ বের করা যাক । ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগ ,
সুতরাং
হাইড্রোজেন পরমাণুর ইলেকট্রন এর জন্য হলে
রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল থেকে ইলেকট্রনের বেগ
ও বোরের পরমাণু মডেল থেকে প্রাপ্ত বেগ প্রায় সমান । এখান থেকে কৌণিক ভরবেগের সঠিকটা নিশ্চিত হয়ে গেলো । এখন বোরের মডেল থেকে পরমাণুর কক্ষপথের ব্যাসার্ধ বের করা হলো ।
রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল থেকে ইলেকট্রনের বেগ ,
এবং বোরের পরমাণু মডেল থেকে ইলেকট্রনের বেগের মান
এখানে বোরের দেওয়া কোয়ান্টাম তত্বের সাহায্যে পরমাণুর মডেল থেকে ইলেকট্রনের বেগ এবং চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের সাহায্যে রাদরফোর্ডের পরমাণুর মডেল থেকে ইলেকট্রনের বেগ সমান ।
সুতরাং লেখা যায় ,
ইলেকট্রন সুনির্দিষ্ট শক্তিস্তরের অবস্থান করে তা স্পষ্ট । ‘ n ‘যেহেতু নির্দিষ্ট তাই শক্তিস্তরও নির্দিষ্ট হবে । আর নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে থাকাকালীন ইলেকট্রন শক্তি বিকিরণ করবে না ।
সমীকরণ 1 নং থেকে n= 1 ধরে হাইড্রোজেন পরমাণুর কক্ষপথের ব্যাসার্ধ নির্ণয় করি
হিসাবকৃত যা নিখুঁতভাবে রাদারফোর্ডের মনের সাথে মিলে যায় । এখান থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় বোরেরে অনুমানকৃত নির্দিষ্ট কক্ষপথে ধারণাও সঠিক ।
7
ইলেকট্রনের মোট শক্তি সম্পর্কিত সমীকরণ বের করা উচিত । রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল থেকে পাওয়া কক্ষপথের শক্তির সমীকরণ ।
এখানে ব্যাসার্ধের ‘ r ‘ এর স্থলে বোরের মডেল থেকে পাওয়া ব্যাসার্ধের মান বসিয়ে পাই ।
2নং সমীকরণে , n=1 ধরে পাই
বোরের এই সমীকরণ থেকে আমরা নিশ্চিত হই ইলেকট্রনের নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে নির্দিষ্ট শক্তি নিয়ে অবস্থান করে ।
এটা ভাবতেও অবাক লাগে বোর অনুমানকৃত কৌণিক ভরবেগের সূত্র থেকে একটা পরমাণু মডেল স্থাপন করে ফেললেন । এখন তৃতীয় স্বীকার্যটি যাচাই করে দেখা যাক ।
ইলেকট্রন এক শক্তিস্তর থেকে অন্য শক্তিস্তরে গেলে শক্তি বিকিরণ করবে ।
এবং
3 নং সমীকরণে E1 ও E2 এর মান বসিয়ে পাই ,
1890 সালে জে আর রিডার হাইড্রোজেন পরমাণুর দৃশ্যমান বর্ণালীর জন্য এমন একটি সূত্র দেন । বোরের অনুমানকৃত তত্ব টিকে গেলো । বোরের তত্ত্বের সফলতা পরমাণুর স্থায়িত্ব কে রক্ষা করলো । তবে বোরের পরমাণু মডেলে অনেক ত্রুটি ছিলো যা পরে সমারফেল্ড ঠিক করে দেয় ।
রেফারেন্স :
১) রহস্যময় কোয়ান্টাম বলবিদ্যা- মোহাম্মদ ইয়াছিন
২) কোয়ান্টাম ফিজিক্স – আব্দুল গাফফার রনি
৩) চা কফি কোয়ান্টাম – নাঈম হোসেন ফারুকী
৪) কণা কোয়ান্টাম – রেজা এলিয়ান
৫) কোয়ান্টাম মেকানিক্স ১ ও 2 – এস . চৌধুরী
৬) বিজ্ঞানসমগ্র – এ.এম.হারুন অর রশীদ
৭) Bohr_model – Wikipedia
৮) https://byjus.com/chemistry/bohrs-model/
৯)https://www.researchgate.net/publication/1752606_Bohr’s_Atomic_Model_Revisited