ডাইমেনশন বা মাত্র এর বেসিক এবং হিস্টোরি জানতে এই পোস্ট পড়ুন। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ উচ্চতা সবই মাত্রা হলেও দৈর্ঘ্য প্রস্থ বুঝতে পারি কিন্তু চতুর্থ মাত্রা বুঝতে পারি না কেন ? উচ্চ ডাইমেনশন আমরা কিভাবে অনুভব করবো ? জানতে হলে এই আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়ুন।
এই পোস্টে ২৮ টি ডাইমেনশনের ভিতরে ৫ টি ডাইমেনশন বা 4D পর্যন্ত আলোচনা করা হবে ।
0 D ডাইমেনশন : যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা কিছু বিদ্যমান নেই তাকে শূন্য ডাইমেনশন বলে । বিন্দুকে বলা হয় জিরো ডাইমেনশন । বিন্দুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ , উচ্চতা নেই । সত্যিকার জিরো ডাইমেনশন কলমের কালি দ্বারা তৈরি ডটের সমান না । জিরো ডাইমেনশন ডটের থেকে অনেক অনেক ক্ষুদ্র , যা দেখা যাবে মাইক্রোস্কোপ লেভেলে ।

জিরো ডাইমেনশনের প্রাণি ( যদি থাকে ) সামনে-পিছনে , উপরে- নিচে যেতে পারবো না । কারণ তার অবস্থান ঐ বিন্দু বা ডটের মধ্যে । ডটের বাহিরে যাওয়া তো অসম্ভব । অনেকটা বেলুনের মতো ডট । বেলুনকে ডট মনে করলে , ডটের বাহিরে অবস্থান নেই । সত্যিকারের শূন্য ডাইমেনশন বিন্দু ( point ) বা ডটের মতো এতো বড় নয় । তবে শূন্য ডাইমেনশন বোঝানোর জন্য পয়েন্ট দ্বারা বোঝানো হয় ।
1D ডাইমেনশন :
কল্পনা করুন দুটি ডট নিয়ে । ডট বা বিন্দু গুলো দূরে অবস্থান করছে । ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে অবস্থানরত দুইটি বিন্দুতে যে সরলরৈখিক রেখা সেটা হলো 1D ডাইমেনশন । 1D ডাইমেনশন শুধুমাত্র x অক্ষ বরাবর অর্থাৎ সামনে- পিছনে চলতে পারবে ।

মনে করুন আপনার বাসার ছাদের উপর দুইটি খুঁটি আছে । খুঁটিতে একটি দড়ি বাধা আছে । দড়ির উপর একটি ইঁদুর হেঁটে গেল । আমরা দড়িকে 1D ডাইমেনশন বলবো । কারণ দড়ির উপর শুধুমাত্র x অক্ষ বরাবর ইদুর চলাচল করতে পারে ।
২য় ডাইমেনশন :
একাধিক 1D ডাইমেনশন যুক্ত হয়ে 2D গঠিত হয় ।

কাঠিকে 1D মনে করুন । বাস্তবে কোনো দড়ি বা কাঠিকে 1D বলা যাবে না । 1D হতে হলে তার কোনো প্রস্থ থাকবে না । তবুও আমরা বুঝার সুবিধার জন্য কাঠি বা দড়িকে 1D ভেবে নেই । একাধিক কাঠি পরস্পর যুক্ত করুন । দেখবেন প্রস্থ সৃষ্টি হবে । অর্থাৎ 1D পরস্পর যুক্ত হয়ে 2D গঠন করে । দ্বিতীয় ডাইমেনশনের প্রাণি শুধুমাত্র X ও Y অক্ষ বরাবর চলতে পারবে । ২য় ডাইমেনশনের জগতের প্রাণী দেখতে চ্যাপ্টা হবে । 2D জগতের প্রাণী শুধুমাত্র ডানে – বায়ে ও উপর- নিচে যেতে পারবে । আপনার হাতের বই বা মোবাইলের তলটি হলো 2D ডাইমেনশন । আপনার ঘরের মেঝে 2D ডাইমেনশনের । মেঝেতে একটি পিঁপড়া থাকলে পিঁপড়ার অবস্থান নির্ণয় করতে হলে আপনি শুধুমাত্র 2D ডাইমেনশন দিয়ে পিঁপড়ার অবস্থান নির্ণয় করতে পারবেন । যদি 2D ডাইমেনশনে কোনো প্রাণী থাকে তাহলে সেই প্রাণী 2D থেকে বেশী ডাইমেনশন দেখবে না ।

উপরের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে সেটা একটি বৃত্তের ভিতরে একটি ত্রিভুজ । উপরের চিত্রটি দেখানো হয়েছে উপর থেকে । পাশে ক নামক একটি প্রাণী আছে । ক প্রাণী 2D জগতের প্রাণী । ক প্রাণী কখনো বৃত্তের ভিতরে যে ত্রিভুজ আছে সেটা দেখতে পাবে না । যদি কেউ দেখতে চায় তাহলে উপর থেকে দেখতে হবে উপর থেকে দেখতে হলে উচ্চতা পরিমাণ উঠতে হবে । তখনি প্রাণীকে 2D নয় 3D জগতের প্রাণী হতে হবে ।
3D ডাইমেনশন : আমাদের পরিচিত জগত তৃতীয় ডাইমেনশন এর । আমরা তৃতীয় ডাইমেনশন পর্যন্ত দেখতে পারি । আমাদের জগতের যত বস্তু চেনা- জানা আছে সব বস্তুকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য তিন মাত্রা পর্যন্ত হলে যথেষ্ট । কোনো বস্তুর আকার- আকৃতি নির্ণয় করার জন্য 3D ডাইমেনশন হলে যথেষ্ট । অথবা আকাশে পাখি উড়লে 3D মাত্রা দিয়ে অবস্থান নির্ণয় করা যায় ।

উপরে যে চিত্র দেখছেন সেটা হলো 3D ডাইমেনশনের কাঠামো । গোলক, ঘনক, বাড়ি, গাড়ি , মানুষ প্রানীর অবস্থান বা আকার নির্ণয় করার জন্য 3D ডাইমেনশন প্রয়োজন ।
3D ডাইমেনশন বা মাত্র তৈরি হয় 2D ডাইমেনশনের সাথে নতুন একটি মাত্রা যুক্ত হয়ে । 2D মাত্রা তৈরি করার জন্য যে কাঠিগুলো নিয়েছিলেন আরো কাঠি নিয়ে আরো একটি 2D স্থান তৈরি করুন । কাঠি দিয়ে মোট ২টি 2D কাঠামো তৈরি করুন । তারপর বস্তুগুলো আঠা দিয়ে যুক্ত করুন ।বস্তু দুইটি একে ওপরের উপর লম্বভাবে স্থাপন করুন যেনো দেখতে আপনার বাড়ির মেঝে এবং দেয়ালের মতো হয় ।

তাহলে ভূমি এবং উচ্চতা পাবেন । এবার পুরো কাঠামো টি 3D কাঠামো ।
২
4D ডাইমেনশন :
চতুর্থ ডাইমেনশনকে বলা হয় স্থান-কাল । স্থান-কাল , নাম দেখলে বোঝা যায় স্থান ও কাল ( সময় ) আছে । অর্থাৎ স্থানের সাথে কালের মাত্রা যুক্ত করলে স্থান-কাল হয় । চতুর্থ মাত্রার ধারণা সর্বপ্রথম প্রদান করে লুইস ল্যাগ্ৰেং । তিনি ষোড়শ শতাব্দীর দিকে ধারণাটি প্রকাশ করেন । পরবর্তীতে ১৮৬৪ সালে বার্নাড রিম্যান ও ১৮৮০ সালে চার্লস পাট হিন্টন 4D ডাইমেনশনের ধারনা দেন । এতোজন ধারণা দেওয়ার পরও নিউটনের 3D জগৎ শক্তপোক্ত অবস্থান দখল করে ছিল । কিন্ত পরবর্তীতে 4D মাত্রার ধারণা নিখুঁতভাবে বের করেছেন এবং আমাদের জগৎ কে নিখুঁতভাবে চিনতে সাহায্য করেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন । আইনস্টাইন দেখতে পান স্থান ও সময় আলাদা কিছু নয় । তারা একই মাত্রার ভিন্ন ভিন্ন রূপ । তিনি কাল ও স্থানকে এক করে স্থান-কাল নামকরণ করেন । আপনার হাতে রাবার ( Flexible Scale ) নিন । স্কেল যেভাবে বাঁকাতে পারেন ঠিক তেমন ভাবে ভরের কারণে স্থান-কাল বেঁকে যায় । স্থান-কাল যে আসলে কেমন এটা বোঝা আমাদের মতো 3D জগতের প্রাণীর কাছে খুবই জটিল বিষয় । কারণ স্থান-কাল চতুর্থ মাত্রার জগৎ । চতুর্থ মাত্রা কেমন হবে সেটা সম্পূর্ণ না বুঝতে পারলে ও কিছুটা অনুভব করতে পারবেন । আসুন অনুভব করি । চারটি খুঁটিতে একটি শাড়ির বা চাদরের কাপড় দিয়ে দোলনা বানান । চাদরের চার মাথা চারটি খুঁটির সাথে টানটান করে বেঁধে ফেলুন । এখন একটি ভারী বস্তু চাদরের উপর ফেলুন । কী দেখছেন ? চাদরটা বেঁকে যাচ্ছে ; তাই না ? এখন একটি বল চারপাশে ঘুরান । দেখবেন বলটি সুন্দর করে ঘুরবে । যেমনটা সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ঘুরে । চাঁদরটি হলো স্থান-কাল এবং বস্তু, বস্তুর ভরের জন্য স্থান – কাল বাঁকিয়ে ফেলবে ।

পাথরটি এমন একটি স্থানে আসে , যেখান থেকে আরো নিচে বস্তুটি নামলে চারটি খুটি থেকে সমান পরিমাণ কেন্দ্রের দিকে সরে আসবে ।

মনে করুন A বিন্দুতে একটি টেনিস বল আছে । 3D জগতে A বিন্দুর বলটি move করলে যেকোনো দিকে সরে যাবে অথবা কাছে আসবে । কিন্তু যদি বিন্দুটি 4D ডাইমেনশনে হয় তাহলে বলটি একই সাথে সকল বিন্দু হতে দূরে সরে যাবে অথবা কাছে চলে আসবে ।
১৮৮০ সালে চার্লস হিন্টন বলেন ; দুটো গতানুগতিক ঘনবস্তু অঙ্কন যা ” অজানা ” দূরত্বে নিজেদের থেকে পৃথক হয়েছে । এরপর এদের সদৃশ ছেদচিহ্ন দিয়ে রেখা অঙ্কন ( 1) । বিষয়টা ব্যাখ্যা করি ,

এই চিত্রটা হলো দুইটা 3D ডাইমেনশনের ঘনবস্তু । ঘনক দুইটি দুই প্রান্তে আছে । মাঝে যে রেখা দেখা যাচ্ছে সেটা হলো কাল্পনিক রেখা । যা স্থান-কাল তৈরি করছে । রেখাটা আমি অঙ্কন করে দিয়েছি তাই জটিল মনে হতে পারে । আমি দুইটি ঘনক অঙ্কন করে দিচ্ছি আপনি পেন্সিল দিয়ে কাল্পনিক রেখা অঙ্কন করুন ।

এখন একটি পেন্সিল নিয়ে কাল্পনিক রেখা আপনি নিজে অঙ্কন করুন । চিত্র : ১ ও চিত্র : ২ দুইটি ঘনক দেখতে পাচ্ছেন ? এখানে অজানা কাল্পনিক রেখা দিয়ে ঘনক দুটির একে অপরের মধ্যে সংযোগ সাধিত হবে । হয়তো আপনি বুঝতে পারছেন কী করতে হবে । পেন্সিল দিয়ে চিত্র : ১ ও চিত্র : ২ এর রেখা টানুন । A থেকে A , B থেকে B , C থেকে C এভাবে টানুন । টানার পর যেটি সৃষ্টি হবে সেটি হলো 4 D ডাইমেনশন । আমরা 2D বইয়ে কখনো 4D এর মতো জটিল একটি ডাইমেনশন আঁকতে পারবো না । আমাদের ব্রেইন সর্বোচ্চ 3D পর্যন্ত দেখতে পারে । 3D এর উপর ডাইমেনশন গুলো আমরা অনুধাবন করতে পারবো না।
যাইহোক স্থানের তিনটি মাত্রা ও সময়ের একটি মাত্রা যোগ করলে যে মাত্রাটি হয় তাকে চতুর্থ মাত্রা বলে । চতুর্থ মাত্রা এমন একটি জগৎ যেখানে আপনি সময়ের সামনে – পিছনে যেতে পারবেন । সময় মাত্রাটা দৈর্ঘ্যের মাত্রার মতো একটি মাত্রা । দৈর্ঘ্যের যেমন সামনে-পিছনে যাওয়া যায় সময় মাত্রাতেও ঠিক একইভাবে সামনে পিছনে গিয়ে অতীত বা ভবিষ্যৎ যেতে পারবেন ।
৩. এবার আসি মূল প্রসঙ্গে । চতুর্থ বা চতুর্থের অধিক মাত্রাগুলো কেমন ? আমরা তৃতীয় মাত্রার প্রানী হয়ে উচ্চতর ডাইমেনশন বা মাত্র অনুধাবন করতে পারবো না । n( th ) তম মাত্রার জগতের প্রানি ( n-1 ) th তম পর্যন্ত ডাইমেনশন দেখতে পায় ( 3 ) । আমরা 3D ডাইমেনশনের বস্তুর গঠন আকার-আকৃতি বের করতে পারি । কিন্তু আমরা 5D বস্তুর ( যদি থাকে ) গঠন বুঝতে পারবো না । 5D প্রানির অবস্থান নির্ণয় করা কঠিন হবে । যে জীবনে আপেল দেখে নাই সে কী বুঝতে পারবে আপেল কী রকম হয় ? যদি তাকে কোনো কিছুর সাপেক্ষে বলা হয় তাহলে আপেলের সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে । তবে সত্যিকার আপেল তো বুঝতে পারবে না । আমি যদি তাকে বলি আপেলের আকার-আকৃতি টেনিস বলের মতো । তারপর যদি বলি লাল টেপ লাগলে টেনিস বল লাল হয় , কালার টা ঠিক তেমন । যখন আমি আপেলের সংজ্ঞা দিবো এইভাবে তখন আপেলের রং আকার-আকৃতি সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে । তাই বলে যে আপেল দেখতে ঠিক এমন এটা ভাবাটা অযৌক্তিক । আমরা তৃতীয় মাত্রার প্রানি হয়ে 4D ডাইমেনশন বা মাত্র বুঝতে পারবো না । তবে সাপেক্ষে হিসাব করলে চতুর্থ মাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে । 2D মাত্রার প্রানির কাছে 3D ডাইমেনশনের জগৎ কেমন হবে এটা দেখি । আমরা জানি দ্বিতীয় ডাইমেনশনের প্রানি ( যদি থাকে ) দেখতে চ্যাপ্টা হবে । হবার কথাও কারণ তার কাছে উচ্চতা বলতে কোনো শব্দ নেই । এখন যদি 3D জগতের কোনো প্রানি ভূমি হতে h উচ্চতায় দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে 2D ডাইমেনশনে থাকা প্রানী তাকে দেখতে পাবে না । কারণ 2D মাত্রার প্রানির কাছে উচ্চতা বলতে কিছু নাই । উদাহরণ হিসাবে কল্পনা করুন আপনি গাড়ির ভিতরে বসে আসেন । গাড়িটা খুবই চমৎকার । ছাঁদে এমন কাঁচ দিয়ে গাড়ি ঢেকে রাখা হয়েছে ভিতরে বসে থাকা কোনো ব্যাক্তি ছাঁদের উপরে কিছু থাকলে দেখতে পারবে না । কিন্তু ছাঁদের উপর থেকে গাড়ির ভিতরে সব দেখা যায় । গাড়ির ভিতরে যে অবস্থান করবে শুধুমাত্র সামনে – পিছনে ডানে বায়ে দেখতে পাবে । উপরে দেখতে পাবে না। যেহেতু উপরে দেখতে পাবে না তাই বোঝার সুবিধার জন্য ধরে নেই তার জন্য উচ্চতা মাত্রা নেই । অর্থাৎ গাড়ির ভিতরে কেউ থাকলে সে 2D মাত্রার ভিতরে আসে । কিন্তু উপর থেকে কেউ দেখলে দেখতে পাবে । যেহেতু গাড়ির ভিতরে ব্যক্তির নিকট উচ্চতা বলতে কিছু নেই তাই উচ্চতা অংশে কেউ থাকলে সেটা দেখতে পাবে না । এই ঘটনা শুধুমাত্র বোঝানোর জন্য উদাহরণ দিয়েছি কিন্তু বাস্তবে গাড়ি 3D মাত্রার ।
অন্য একটি উদাহরণ দিলে মন্দ হয় না । একটি পাইপকে x অক্ষ বরাবর এক মাত্রিক মনে করুন । পাইপের ভিতরে একটি ইঁদুর ঢুকলে ইঁদুরের জন্য সেটা এক মাত্রিক মনে হবে । কারণ ইঁদুর হয় সামনে যেতে পারবে অথবা পিছনে যেতে পারবে । পাইপের ভিতরে ডান-বাম এবং উচ্চতা বলতে কিছু নেই । এই উদাহরণ সত্যিকার 3D মাত্রার ভিতরে 2D বা 1D নয় । শুধুমাত্র বোঝানোর জন্য নেওয়া হয়েছে । চতুর্থ মাত্রা আমরা বুঝতে পারবো না । অনেকটা আপেল না দেখে টেনিস বলকে আপেল মনে করলে যা মনে হবে এমন । 2D মাত্রার কাছে 3D যেমন ঠিক 3D এর কাছে 4D তেমনি । আমরা 3D পর্যন্ত দেখি । তাই বলে যে আমাদের মহাবিশ্ব 3D মাত্রা পর্যন্ত সেটা ভাবলে ভুল হবে । আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারবো না মহাবিশ্বে মোট মাত্রা এতগুলো তবে সর্বোচ্চ শক্তিশালী গাণিতিক থিওরি Bosonic string theory অনুযায়ী বলতে পারি আমাদের মহাবিশ্বের মাত্রা 26 টি । হয়তো আমাদের গবেষণা আরো উন্নত হবে এবং নতুন কোনো মাত্রার হদিস পাবো অথবা 26 এ এসে এ তত্ত্ব ইতি টানবে ।
ডাইমেনশন বা মাত্রার বেসিক
কোনো একটা বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করার জন্য এমন একটি স্থান বিবেচনা করেন যার সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করা যায় । এখানে বিবেচনা করা স্থানকে প্রসঙ্গ কাঠামো বলবো। এই অধ্যায়ে আমরা মাত্রা নিয়ে আলোচনা করবো, প্রসঙ্গ কাঠামো সম্পর্কে পরবর্তী অধ্যায়ে জানবো । মাত্রা সম্পর্কে জানতে হলে মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানতে হবে , মহাবিশ্বের সকল বস্তুর আকার আকৃতির ভূমিকা কী বুঝতে হবে । এই অধ্যায় পড়লে আপনি সম্পূর্ণ মহাবিশ্বকে বুঝতে পারবেন, এমনটা ভাবার কিছু নেই । কারণ এই মহাবিশ্ব খুবই বড় । কেউ কেউ দাবি করেন এই মহাবিশ্বের বড় হওয়াটা অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত । আবার কেউবা দাবি করে মহাবিশ্ব সসীম । কিন্তু আমি জানিনা এই সসীমের শেষ কোথায়!! আমরা এখন পর্যন্ত 93 বিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্ত অবজারভেশন করতে পেরেছি । কিন্তু মজার কথা হলো আমরা মহাবিশ্বকে যতটুকু দেখেছি তার মধ্যে মোট পদার্থের 5% দৃশ্যমান বস্তু আর বাকি 95 % অদৃশ্য , অজানা পদার্থ রয়েছে । অতএব আমি দাবি করবো না এই অধ্যায় পড়লে মহাবিশ্বকে সম্পূর্ণ জানতে পারবেন । তবে আশা রাখি যে আপনি বস্তুর গঠনের ক্ষেত্রে মাত্রার ভূমিকা বুঝতে পারবেন । ডাইমেনশন বা মাত্র কী কাজে লাগে ?
মাত্রা কোনো বস্তু বা স্থান সম্পর্কে ধারণা দেয় । মনে করুন , আপনার বাড়ির সামনে একটি বড় বিল্ডিং রয়েছে । আপনি দাঁড়িয়ে সেটা দেখছেন । মনে করুন আপনার সাপেক্ষে বিল্ডিংয়ের দূরত্ব সোজা 10 মিটার । এইক্ষেত্রে 1D বা X অক্ষ বরাবর হিসাব করলে বিল্ডিংয়ের অবস্থান নির্ণয় করা যায় ।

কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন তার থেকে সোজা 10 মিটার না । আপনাকে আরো 5 মিটার ডানে যেতে হবে । এক্ষেত্রে বিল্ডিংয়ের অবস্থান নির্ণয় করার জন্য শুধুমাত্র X অক্ষ দিয়ে পরিমাপ করলে হবে না তখন আপনাকে 2D মাত্রা দিয়ে ব্যাখ্যা করতে হবে ।

যদি বিল্ডিংয়ের উপর একটি পাখি থাকে তাহলে তখন পাখির অবস্থান নির্ণয় করতে আপনাকে x,y,z অক্ষের সাপেক্ষে নির্ণয় করতে হবে ।

দেখুন উপরের চিত্রে একটি বাড়ি আছে । বাড়ির আয়তন পরিমাপ করার জন্য অবশ্যই আপনাকে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ , উচ্চতা জানতে হবে । এই যে দৈর্ঘ্য , প্রস্থ , উচ্চতা এগুলো হলো মাত্রা । কোনো স্থান বা বস্তু এই ৩টি মাত্রা দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যে কোনো বস্ত পরিমাপ করুন দেখুন তিনটি মাত্রা থাকলে যথেষ্ট । শুধুমাত্র তিনটি মাত্রা দ্বারা সবকিছু পরিমাপ করতে পারবেন এমনটা ভাবা ঠিক নয় । আপনি যে বিল্ডিংয়ের উপর পাখির অবস্থান ( x,y,z ) দ্বারা পরিমাপ করছেন । পাখি কী সারাজীবন একই স্থানে থাকবে ? আজকে পাখি আছে কালকে নাও থাকতে পারে । তাই পাখি যে সকাল 9 টা বাজে ছিল এটা উল্লেখ করা উচিত । অর্থাৎ দৈর্ঘ্য , প্রস্থ , উচ্চতা সহ আরো একটি মাত্রা সময় যুক্ত করতে হবে । যতো বেশি মাত্রা দ্বারা বস্তুকে সংজ্ঞায়িত করা হবে ততো নিখুঁতভাবে ফলাফল পাওয়া যাবে । তবে প্রত্যেকটি বস্তুর অবস্থান নির্ণয়ে ন্যূনতম মাত্রা থাকতে হবে । যেমন পাখির অবস্থান নির্ণয় করতে শুধুমাত্র দৈর্ঘ্য, প্রস্থ দ্বারা হবে না। ন্যূনতম 3D ডাইমেনশন বা মাত্র প্রয়োজন । বস্তু সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা পাবার জন্য সর্বনিম্ন যতগুলো স্থানাঙ্কের প্রয়োজন তাকে ডাইমেনশন বা মাত্র বলে ।
রেফারেন্স
(১) https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9A%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95_%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0